your doctor

Mail: yourdoctor.hello@gmail.com

YOUR DOCTOR

Wednesday 9 February 2011

নিপা ভাইরাস, আতংক নয় চাই সচেতনতা

সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে যে ভাইরাসটি জনমনে ব্যাপক আতংক সৃষ্টি করেছে তার নাম নিপা ভাইরাস। নামটি খুব সাদামাটা হলেও এই ভাইরাসটি কিন্তু খুবই মারাত্মক। এই ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে এনকেফালাইটিস (মস্তিষ্কের প্রদাহ) নামক রোগ সৃষ্টি করে। এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশী। অঞ্চলভেদে ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ প্রায়। ২০০১ থেকে এ বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাব অনুসারে বাংলাদেশে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ১৫৩ জনের মধ্যে ১১৩ জনেরই মৃত্যু হয়েছে । আর এই ফেব্রুয়ারিতে গত কয়েকদিনে মারা গেছে প্রায় ২৭ জন ।

নিপা ভাইরাস আসলে কি? নিপা ভাইরাস প্যারামিক্সো পরিবারের সদস্য। রাসায়নিক গঠনের দিক থেকে এটি এক ধরনের 'আর এন এ' ভাইরাস। প্রাণী দেহে বাস করে বলে একে জুনোটিক ভাইরাসও বলে। নিপা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় মালয়েশিয়ার পেনিনসুলায় ১৯৯৮ সালে শুকরের শরীর থেকে। ধারণা করা হয় এর উদ্ভব ঘটেছে আরো আগে সম্ভবত ১৯৯৪ সালে। তবে পরবর্তীতে সিংগাপুর ও ভারতেও রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাস বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় ২০০১ সালে।  সাম্প্রতিককালে লালমনিরহাটে শনাক্ত হওয়ার আগে ফরিদপুর, রাজবাড়ি ও টাঙ্গাইল এলাকায় নিপা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল ।


কিভাবে ছড়ায়?  নিপা ভাইরাস ছড়ায় মূলত বাদুড়ের মাধ্যমে। মানুষ, কুকুর,বিড়াল প্রভৃতি এর মধ্যবর্তী পর্যায়। বাংলাদেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এই সময়টাতেই খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। বাদুড় গাছে বাঁধা হাড়ি থেকে রস খাওয়ার চেষ্টা করে বলে ওই রসের সঙ্গে তাদের লালা মিশে যায়। সেই বাদুড় নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে এবং সেই রস খেলে মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এ ভাইরাস। এছাড়া বাদুড়ের আধ-খাওয়া ফল এবং আক্রান্ত মানুষ থেকে মানুষেও  ছড়াতে পারে এ রোগ।

রোগ লক্ষণ: নিপা ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ৮ থেকে ১২ দিন পর রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়। প্রাথমিক ভাবে লক্ষণগুলো জ্বর, মাথাব্যাথা, মাথাঘোরা, দুর্বলতা, বমিরভাব, গলাব্যথা, কাশি, শ্বাস কষ্ট ইত্যাদি। তবে রোগের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে জীবানু কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে। তখন তীব্র জ্বরের সাথে রোগী অচেতন হয়ে পড়ে, খিচুনি হয়, প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হয় অতঃপর কোমায় চলে যায়। এভাবে এক পর্যায়ে রোগীর মৃত্যুর ঘটে।

পরীক্ষা নিরীক্ষা: এলাইজা টেস্ট, পিসিআর, সেল কালচার প্রভৃতি পরীক্ষার মাধ্যমে এই ভাইরাস শনাক্ত করা সম্ভব। বাংলাদেশের সংক্রামক ব্যধি নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইআইডিসিআর দ্রুত এই রোগ শনাক্ত করে বিশেষ সাফল্য দেখিয়েছে। বেশ কিছু বেসরকারী ল্যাবরেটরীতেও এই পরীক্ষাগুলো করা হয়।

চিকিৎসা: নিপা ভাইরাস জনিত এনকেফালাইটিসের খুব কার্যকর কোন চিকিৎসা আসলে নেই। প্রাথমিক পর্যায়ে রিভাবিরিন জাতীয় এন্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে রোগের তীব্রতা কিছুটা কমে। কাশি, জ্বর বা অন্যান্য লক্ষণের জন্য লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। এন্টিবায়োটিকের সরাসরি  কোন ভূমিকা না  থাকলেও সেকেন্ডারী ইনফেকশন প্রতিরোধে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে। তীব্র শ্বাস কষ্ট দেখা দিলে বা রোগী অচেতন হয়ে গেলে প্রয়োজনে ভেন্টিলেটর মেশিন (কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র)-এর মাধ্যমে কৃত্রিম ভাবে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যাবস্থা করতে হতে পারে।


প্রতিরোধে চাই সতর্কতা:
খেজুরের রস, আধখাওয়া ফল পরিহার করতে হবে। ফল ও শাকসবজি ভাল করে ধুয়ে খেতে হবে।এই রোগটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে। এ রোগে আক্রান্তদের পরিচর্যা করতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রোগীর ব্যবহৃত কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী ভালোভাবে পরিষ্কার না করে আবার ব্যবহার করা যাবে না। রোগীর পরিচর্যা করার পর হাত ভালোভাবে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। রোগীর কফ ও থুতু যেখানে সেখানে না ফেলে একটি পাত্রে রেখে পরে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। রোগীর সঙ্গে একই পাত্র খাওয়া বা একই বিছানায় ঘুমানো যাবে না। রোগীর শুশ্রূষা করার সময় মুখে কাপড়ের মাস্ক পরে নিতে হবে।

আতংক নয়, সচেতনতা: আর সব ছোঁয়াচে রোগের মতই নিপা এনকেফালাইটিস ও সচেতনতার মাধ্যমে অনেকখানিই প্রতিরোধ করা সম্ভব। অযথা আতংকিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। বরং প্রয়োজন সচেতনতা। ইতোমধ্যেই সরকারী পর্যায়ে বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ২০০৬ সাল থেকে  রংপুর, ফরিদপুর, বগুড়াসহ ছয়টি হাসপাতালে নিপা ভাইরাসে আক্রানতদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আলাদা ইউনিট এবং বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

No comments: